ক্রিকেট খেলার মাঠে যত দূর্ঘটনা



বলের আঘতে মাটিতে লুটিয়ে পড়া ফিলিপ হিউজ ছবি-সংগৃহিত


ক্রিকেটকে বলা হয় ভদ্রলোকের খেলা। খেলোয়াড়দের সার্বিক নিরাপত্তার কথা ভেবে বিভিন্ন ধরণের নিরাপত্তা সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয় । মাথা থেকে শুরু করে পা পর্যন্ত নিরাপত্তা সামগ্রী ব্যবহার করেন প্রত্যেক খেলোয়াড়। তারপরও  ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় ক্রিকেট মাঠে বিভিন্ন সময়ে ঘটে যাওয়া দূর্ঘটনার তালিকা কম লম্বা নয়। অনেক সময় ক্রিকেট মাঠে রক্ত ঝরতেও দেখা গেছে। তেমন কিছু ক্রিকেট মাঠে ঘটে যাওয়া দূর্ঘটনা খবর তুলে ধরা হলো।

ফিলিপ হিউজ (অস্ট্রেলিয়া):

অস্ট্রেলিয়ার একজন প্রতিভাবান ক্রিকেটার ছিলেন। তিনি অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ২৬ টি টেস্ট ম্যাচ এবং ২৫ টি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন। সাউথ অস্ট্রেলিয়া বনাম নিউ সাউথ ওয়েলসের মধ্যে ম্যাচ চলছিলো। শন অ্যাবটের করা একটি বাউন্সার তার মাথার পিছনে আঘাত করে।তিনি মাঠে লুটিয়ে পড়েন। অজ্ঞান হয়ে যান কিছুক্ষণের মধ্যে। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয় । অপারেশন করা হলেও ২৫ বছর বয়সী হিউজ তিন দিন পর মারা যান।

রমন লাম্বা (ভারত):

রমন লাম্বা ভারতীয় একজন ক্রিকেটার ছিলেন। ভারতের হয়ে ৪ টি টেস্ট ও ৩২ টি ওয়ানডে ইন্টারন্যাশনাল ম্যাচ খেলছেন। ১৯৯৮ সালে ঢাকায় মুখোমুখি হয়েছিলো আবাহনী ক্রীড়া চক্র ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। সিলি পয়েন্টে ফিল্ডিং করছিলেন রমন লাম্বা। বোলার সাইফুল্লাহ খানের বলে জোরালো পুল করেন ব্যাটার মেহরাব হোসেন। বল লাম্বার কপালে লেগে উইকেট রক্ষকের গ্লাফসে জমা পড়ে। মেহরাব আউট হন। কিন্তু লাম্বা মাঠে পড়ে যান পরে উঠে ড্রেসিং রুমে রওনা দেন। পরবর্তীতে হাসপাতালে ভর্তি হন । ডাক্তার ভারত থেকে নিয়ে আসা হয় কিন্তু রমন লাম্বা ৩ দিন পর মারা যান।

আবদুল আজিজ (পাকিস্থান):

পাকিস্তানী ব্যাটসম্যান আবদুল আজিজ। ১৯৫৯ সালে করাচিতে একটি খেলায় ব্যাট করার সময় বাউন্সার বলে বুকে আঘাত পান। তিনি ১৭ বছর বয়সী একজন তরুন ক্রিকেটার। তিনি অবশ্য হার্টের অসুস্থ্যতায় ভুগছিলেন। আঘাতের কারনে তিনি মারা যান।

মার্ক ভারমুলেন (জিম্বাবুয়ে):

জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটার মার্ক ভারমুলেন ভারতের ইরফান পাঠানের বলে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হন। তিনি ক্যারিয়ারে দুই বার আঘাত পান। যদিও তিনি পরবর্তীতে সুস্থ্য হয়ে ওঠেন।

রাইলি রুশো (দক্ষিণ আফ্রিকা):

দক্ষিন আফ্রিকার তারকা ব্যাটার। ২০১২ সালে শ্রীলঙ্কান প্রিমিয়াম লীগের একটি ম্যাচে লাসিথ মালিঙ্গার একটি বাউন্সার বলে মারাত্মক আঘাত পান তার নাক দিয়ে রক্ত ঝরতে থাকে। তাকে তৎক্ষনাত চিকিৎসা দেওয়া হয় পরে তিনি সুস্থ্য হয়ে ওঠেন। রুশো এ পর্যন্ত দক্ষিন আফ্রিকার হয়ে ৩৬ ওডিআই এবং ২৯ টি২০ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন।

 

 

আহমেদ শেহজাদ (পাকিস্থান):

পাকিস্তানী ব্যাটার আহমেদ শেহজাদ।  নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে কোরি অ্যান্ডারসনের বলে আঘাত পান শেহজাদ। তাকে মাঠের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। পরবর্তীতে সুস্থ্য হয়ে ওঠেন।

মাইক গ্যাটিং (ইংল্যান্ড):

মাইক গ্যাটিং ১৯৮৬ সালে  জ্যামাইকাতে একটি ওয়ান্ডে ম্যাচ খেলছিলেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেসার ম্যালকম মার্শালের একটি বাউন্সার গ্যাটিংকে আঘাত করে। বলটির গতি খুব বেশি ছিলো  ফলে নাকে আঘাত করায় প্রচুর রক্তক্ষরন হয়।

মার্ক বাউচার (দক্ষিণ আফ্রিকা):

মার্ক বাউচার দক্ষিন আফ্রিকার খ্যাতিমান উইকেট রক্ষক ব্যাটার। তিনি সমারসেটেরবিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলছিলেন। ইমরান তাহিরের একটি গুগলি বল বাউচারের বাম চোখে আঘাত করে। রক্তাত্ব চোখ নিয়ে মাঠ ছাড়েন বাউচার। পরে চিকিৎসক জানান বাউচারের চোখ ক্রিকেট খেলা্র উপযোগী আর নেই। ফলে মার্ক বাউচার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

গ্যারি কারস্টেন (দক্ষিন আফ্রিকা):

গ্যারি কারস্টেন দক্ষিন আফ্রিকার ওপেনিং ব্যাটার ছিলেন। ২০০৩ সালে টেস্ট ম্যাচে পাকিস্থানের মুখোমুখি হয় আফ্রিকা। পাকিস্থানের স্পীড স্টার শোয়েব আখতারের বলে আঘাতপ্রাপ্ত হন কারস্টেন। শোয়েব আখতারের বাউন্সার ব্বল হুক করতে যেয়ে মিস করেন ।বল গিয়ে সরাসরি  হেলমেটের ভিতর দিয়ে বাম চোখের নিচে আঘাত করে তার নাক ক্ষতিগ্রস্থ হয় প্রায় ১০ সেলাই দেওয়ার প্রয়োজন হয়েছিলো। পরে সুস্থ্য হয়ে ওঠেন।

ওয়াসিম রাজা (পাকিস্থান):

তিনি ছিলেন পাকিস্থানের ক্রিকেট ধারাভাষ্যকার ও সাবেক ক্রিকেটার রমিজ রাজার ভাই। ওয়াসিম রাজা পাকিস্থানের হয়ে ৫৭ টি টেস্ট ও ৫৪ টি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন। ২০০৬ সালে ইংল্যান্ডে কাউন্টি খেলায় ব্যাট করছিলেন। হঠাৎ কার্ডিয়াক অ্যাটাক্ট হয় । পরে তিনি মারা যান।

জন ওয়ার্ড (অস্ট্রেলিয়া):

ক্রিকেট খেলার সময় শুধু খেলোয়াড়ই নয় আম্পায়ারও দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। ভারতের তামিল নাড়ুতে স্বাগতিক দল ও পাঞ্জাব মুখোমুখি হয়েছিল। পাঞ্জাবের ব্যাটার রাজবিন্দর স্ট্রেট ড্রাইভ করলে আম্পায়ার জন ওয়ার্ড আঘাত পান। তীব্র গতির বল থেকে নিজেকে বাচানোর চেষ্টা করলেও তার মাথার পিছনে আঘাত লাগে। সাথে সাথে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান। হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরবর্তীতে সুস্থ্য হয়ে ওঠেন।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ